মোহাম্মদ আলী নিজের দেশের বিরুদ্ধে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন মানবতার পক্ষে
‘ভিয়েতনামের মানুষের সঙ্গে আমার কোনো ঝগড়া নেই। শুধু সাদা চামড়ার মানুষের আধিপত্য বজায় রাখার জন্য ১০ হাজার মাইল দূরের কোনো দেশে গিয়ে মানুষের ওপর অত্যাচার করা, খুন করা, বোমা ফেলা এই কাজে আমি যুক্ত হব না। পৃথিবীর বুকে এসব অবিচার বন্ধ হওয়া উচিত।’
অনেক কিছু হারাতে হতে পারে জেনেও মোহাম্মদ আলী নিজের দেশের বিরুদ্ধে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন মানবতার পক্ষে। অস্বীকার করেছিলেন ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যেতে। কারণ তিনি ছিলেন এমনই একজন মানুষ; যার ছিল মানবতার প্রতি ভালোবাসা।
এর জন্য তাকে মাশুলও দিকতে হয়েছিল। খেলার লাইসেন্স সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ হয়েছিল। গ্রেফতারও হয়েছিলেন তিনি। আর কেড়ে নেওয়া হয়েছিল অনেক খেতাবও। তারপরও মানবতার বিরুদ্ধে গিয়ে কোনো কাজ করেননি দ্যা গ্রেটেস্ট মোহাম্মদ আলী।১৯৬৭ সালে ভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাস ও ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরোধিতার কারণে গ্রেফতার হওয়ার পর নিজের অলিম্পিক স্বর্ণপদক ওহাইও নদীতে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন। পরে ১৯৯৬ সালের আটলান্টা অলিম্পিকে সেই স্বর্ণপদক তাকে আবার ফিরিয়ে দেয়া হয়।
১৯৭৯ অবসরে যাবার পর বিভিন্ন মানবতাবাদী কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্তি, সবার জন্য শিক্ষা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সমঝোতা উন্নয়ন প্রভৃতি ক্ষেত্রে তার আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলেন।বর্ণিল কর্মজীবনে মোহাম্মদ আলী ছিলেন আপোসহীন একজন মানুষ। অন্যায়, অবিচারের কাছে কখনই মাথা নত করেননি। মোহাম্মদ আলী শুধু তার দুই হাত দিয়ে মুষ্টিযুদ্ধই করেননি। তিনি ছিলেন অবিচল, আপোষহীন এক সংগ্রামী পুরুষ।
সনি লিস্টন আর ফ্রেজিয়াররাই তার প্রতিপক্ষ ছিল না; অন্যায়, সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন, বর্ণবাদ, জাতিগত ভেদাভেদের বিরুদ্ধেও তিনি ছিলেন সোচ্চার। তার এই দৃঢ়তাই বলে দেয় তার মুষ্টি যেমন প্রতিপক্ষের চেহারা আর শরীরকে এবড়ো থেবড়ো করে দিয়েছেন; ঠিক তেমনি আজ পৃথিবীর মানুষ যদি তাদের মুষ্টিকে ঐক্যবদ্ধ করে তাহলে দুমড়ে-মুচড়ে যাবে অন্যায়-অবিচার, রক্তপাত, বর্ণবাদ, দারিদ্র্য, আর প্রতিষ্ঠিত হবে মানবজাতির কাঙ্ক্ষিত শান্তি।
Post a Comment