ক্রিকেট এখন জনপ্রিয় পেশা বাংলাদেশে।
ছেলে বড় হয়ে ডাক্তার হবে, ইঞ্জিনিয়ার হবে বা বড় কোম্পানিতে চাকরি করবে– সেসব গল্প এখন পুরনো। নতুন গল্প হলো পরিবারের সবাই এখন জোর গলায় বলতে পারে, আমার ছেলে মাশরাফি, সাকিব বা মোস্তাফিজ হবে।
যারা দেশের জন্য প্রতিদিন সুনাম বয়ে আনে, বিশ্ববাসী যাদের খেলা দেখার জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকে, যাদের খেলার সময় কোটি বাঙালি এক হয়ে তাদের জন্য দোয়া করে– সেই পেশাটি নিয়ে মানুষ মাতামাতি করবে সেটাই স্বাভাবিক।
তাই ভোর হতেই ক্রিকেট সরঞ্জামে ভরা ব্যাগ নিয়ে অনেকে ছুটে যায় খেলার মাঠে বা একাডেমিতে। রাজধানীর কলাবাগান মাঠ, ইন্দিরা মাঠ ও আবাহনী মাঠে ভোর থেকে রাত পর্যন্ত চলতে থাকে ক্রিকেট প্রশিক্ষণ। তাদের চোখে একটাই স্বপ্ন– বড় হয়ে মেহেদী হব, তাসকিন হব।
তবে মানুষের মনে ক্রিকেটের বাসা বাঁধার পথটি খুব বেশি সহজ ছিলো না। অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। তার সঙ্গে ছিলো সাহসী আত্মবিশ্বাসী ক্রিকেটারযোদ্ধারা। যারা বাংলাদেশের ক্রিকেটকে বিশ্বদরবারে পরিচয় করাতে সাহায্য করেছেন। তাদের জন্যই আজ অনেকেই পেশা হিসেবে ক্রিকেটকে বেছে নিচ্ছে।
কেন পেশা হিসেবে ক্রিকেটকে বেছে নিচ্ছে তরুণরা
ক্রিকেট খেলা বর্তমানে শুধু বিনোদন নয়, সময় এবং ক্রিকেটের চাহিদার কারণে শখের খেলা ক্রিকেট পেশাদারি হিসেবে রূপ নিয়েছে। এর পেছনে একটাই কারণ পেশা হিসেবে ক্রিকেটে এখন অর্থের সঙ্গে রয়েছে খ্যাতি। অন্যান্য পেশার চেয়ে এ পেশার রয়েছে উন্মাদনা, ব্যাটিং, বোলিং আর ফিল্ডিংয়ের জাদু। সঙ্গে থাকে বাড়তি স্নায়ুচাপ ও ক্রিকেটপ্রেমীদের আবেগ। তাই ক্রিকেট খেলা অনেকের কাছে রোমাঞ্চকর ব্যাপার।
তাছাড়া বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেটারদের তালিকায় টাইগাররাও রয়েছে। জাতীয় দল, ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা খেলে কোটি কোটি টাকা আয় করছেন বাংলাদেশী ক্রিকেটাররা।
আর যারা এই রোমাঞ্চকর পেশায় নিজেকে জড়াতে চান তাদের ছোটবেলা থেকেই মনস্থির করে নিতে হবে। কারণ মনস্থির করতে না পারলে ক্রিকেটে টিকে থাকা সম্ভব নয়। অনেক আবার এও ভেবে নেন, ক্রিকেট খেললে বোধহয় পড়াশুনা করতে হয় না।
যাদের এই ধরনের ধারণা রয়েছে তাদের উদ্দেশে জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক সফল অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন বলেছেন, ক্রিকেট খেলার সঙ্গে সঙ্গে অবশ্যই তাকে ভালো মতো পড়াশুনা করতে হবে। আর যারা এটিকে পেশা হিসেবে নিতে চান তাদের জন্যে আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পড়াশুনা জানা থাকলে ক্রিকেট খেলাটি আরো বেশি সহজ হয়ে যায়। খেলার অনেক বিষয় থেকে তাকে পিছিয়ে থাকতে হয় না।
অবশ্য ক্যারিয়ার হিসেবে ক্রিকেট নেওয়ার প্রাথমিক প্রস্তুতি প্রথমে পরিবারের কাছ থেকে নেওয়া খুব জরুরি বলে মনে করেন তিনি। কারণ পরিবারের সাপোর্ট না থাকলে এ পেশায় টিকে থাকা খুব কঠিন।
‘তার জন্য পরিবারকে আগেই বোঝাতে হবে আপনি ক্যারিয়ার হিসেবে ক্রিকেটকে বেছে নিয়েছেন। কারণ পরিবারের অনেকে এটাকে পেশা হিসেবে মেনে নিতে চাইবেন না।’
তাই যারা ক্যারিয়ার হিসেবে ক্রিকেটকে নিতে ভয় পান তাদের কিছুটা ভয় কমিয়ে হাবিবুল বাশার বলেছেন, আমরা যখন ক্রিকেট খেলতাম তখন ক্রিকেটকে পেশা হিসেবে নেওয়া যেত না। অনেকে খেলার পাশাপাশি অন্য অনেক কাজ করতো। আর এখন পেশা হিসেবে ক্রিকেটকে খুব ভালোভাবে নেওয়া যায়। জাতীয় টিমে খেলার সুযোগ না থাকলেও ঘরোয়া লীগ ও বিপিএল লীগের খেলার সুযোগতো থেকেই যায়।
তিনি বলেন, খেলতে খেলতে ক্রিকেটের প্রথম ধাপ শিখতে হয়। তবে এর জন্য নিতে হবে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ।
জাতীয় দলের সাবেক কোচ সালাউদ্দিনবলেন, ক্রিকেটে আসতে চাইলে প্রথমে তাকে পরিশ্রমী হতে হবে। এবং ছোটবেলা থেকে একটি ভালো একাডেমিতে ভর্তি হতে হবে। ক্রিকেটের প্রতি তার সঠিক ভাবনা থাকতে হবে।
একসময় সাকিব আল হাসানের এ বোলিং কোচ বলেন, আগামী প্রজন্মের মধ্যে ক্রিকেটের প্রতি যে ভালোবাসা আছে সেই ভালোবাসা নিয়েই প্রচুর ট্রেনিং করতে হবে। শুধু একাডেমিতে ভর্তি হলেই হবে না, প্রচুর পরিশ্রমী হতে হবে। নিজেকে সেরা ক্রিকেটার তৈরি করার জন্য যা করা দরকার তাই করতে হবে।
তাছাড়া এই পেশায় যদি নিজেকে সেরা আসনে বসাতে পারেন তাহলে কখনোই এ পেশা থেকে আপনাকে অবসর নিতে হবে না। এ পেশার কোনো না কোনো মাধ্যমে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পারবেন।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আকরাম খান, খালেদ মাসুদ পাইলট, হাবিবুল বাশার সুমন, রকিবুল হাসানসহ ক্রিকেট অঙ্গণের তারকা যারা খেলোয়াড় জীবন শেষে ক্রিকেটের বিভিন্ন জায়গায় নিজেদের তুলে ধরেছেন।
Post a Comment