২০০ টাকার খ্যাপের খেলোয়াড় আজকের তাসকিন
২০০৯ সালের কথা। এক লিকলিকে কিশোর ফাস্ট বোলার। তবে দেখতে বেশ সুদর্শন। ক্রিকেট অ্যাকাডেমির এক সিনিয়র ক্রিকেটারকে রাজি করালো তাকে এক ম্যাচের জন্য ‘হায়ার’ করতে। অন্যভাবে বললে ‘খ্যাপ’ খেলার জন্য।
সেই সিনিয়র ক্রিকেটারের নাম রনি গোপ। আগ্রহী সেই কিশোর পেসারের ওপর আবদার রনি রেখেছিলেন। তবে এতোটুকু কিশোর বড়দের সাথে একটা প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে মাঠে নামবে- চাপটা সামলাতে পারবে কিনা, সেটা নিয়ে তার মনে সংশয় ছিলো। তার ওপর ছেলেটা খেলবে বাইরের ক্রিকেটার হিসেবে। এসব ম্যাচে বাইরের ক্রিকেটারদের ভালো খেলাটা যেন বাধ্যতামূলক। না হলে অনেক কথাই উঠে। রনি গোপের এটাও মাথায় ছিলো।
প্রিয় পাঠক, অনুমান করতে পারবেন, কে ছিলো সেই খ্যাপ খেলতে চাওয়া ক্রিকেটার। হ্যা, খ্যাপের এই কথা চলছিলো আমাদের ফাস্ট বোলিংয়ের তারকা তাসকিন আহমেদের সাথে!
তাসকিন তখন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৫ দলের ক্রিকেটার। কোনো চ্যালেঞ্জ থেকে দূরে সরে যাওয়ার ভয় এই পেসারের মনে কখনো ছিলো না। এটাই তো পেসারদের সহজাত বৈশিষ্ট্য। এমন মনোভাবের জন্ম হয়েছে অচেনা পরিবেশে বড়দের সাথে খেলা থেকেই।
সিদ্ধান্ত নেওয়াটা রনির জন্য কষ্টকরই ছিলো। কেরাণিগঞ্জে একটি টি-২০ ম্যাচ খেলতে রনিকে হায়ার করা হয়েছিলো। তাসকিনের কথায় রনি গোপ তখনো আশ্বস্ত হননি। তাই তাসকিনের এ আগ্রহ দমানোর জন্য জানিয়েছিলেন সে মাত্র ২০০ টাকা পাবে। তবে রনির এ চিন্তা বৃথা যায়। রনি যা ভাবে তাসকিনের মাথায় তখন ঠিক উলটো ফন্দি। তাসকিন জবাব দিয়ে বসে, ‘আমার জন্য এটা যথেষ্টর চেয়েও বেশি। আসা-যাওয়ার ভাড়ার জন্য ১০০ টাকা লাগবে আর বাকি ১০০ টাকা খাওয়ার জন্য।’
এ গল্পটা দেখিয়ে দেয় যে তাসকিনের বেড়ে উঠার সময়টাতে তিনি খেলার জন্য কতটা দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলো। সফলতার জন্য যেকোন ক্রিকেটারের ক্ষেত্রে এটা খুব জরুরী।
অবশেষে কেরাণিগঞ্জে খেলার জন্য রনি তার সাথে তাসকিনকেও সঙ্গে নিলো। কিন্তু সেখানে গিয়ে আরেক বাধা। বয়স কম দেখে তাসকিনকে খেলানো নিয়ে আপত্তি করলো টিম অফিসিয়ালরা। তাসকিনের সৌভাগ্য রনি ছিলেন। সেখান থেকে রনিই বাঁচিয়েছিলেন তাকে। তাসকিনকে খেলানোর অনুমতি দিতে টিম অফিসিয়ালদের রাজি করালেন।
১৫ বছর বয়সী তাসকিনের তেজ বোঝার জন্য তার প্রথম ওভারেই টানা দুই বলে দুই উইকেট শিকার যথেষ্ট ছিলো। তার এমন কাণ্ড দেখে টিম অফিসিয়াল থেকে মাঠের দর্শক- সবাই হতবাক।
ম্যাচ নিয়ে তাসকিনের ভাষ্য, ‘আমার ম্যাচটার কথা মনে আছে। আমি প্রথম ওভারে দুই উইকেট পেয়েছিলাম। আমার এটাও মনে আছে যে ম্যাচটার জন্য ২০০ টাকা পেয়েছিলাম। তখন সাদা বলে একটা টি-২০ ম্যাচ খেলা আমার জন্য বিশাল ব্যাপার। কখনোই আমি টাকা নিয়ে মাথা ঘামাতাম না।’
‘খেলার মাঝে অনেক দর্শক মাঠে এসেছিলো। আমি যখনই উইকেট পাচ্ছিলাম তারা ২০ টাকা, ৫০ টাকা দিচ্ছিলো আমাকে। আমি এর আগে কখনো এমনটা দেখিনি এবং এটা আশ্চর্যজনক অভিজ্ঞতা ছিলো।’
ক্যারিয়ারের একদম শুরু থেকেই খেলার অতৃপ্ত ক্ষুধা আর প্রতিজ্ঞা ছিলো এই তরুণের মাঝে। তার এ বৈশিষ্ট্যগুলো যেনো আরো সার্থক হলো জাতীয় দলের হয়ে প্রথম সফরে গিয়ে।
এখন টাইগারদের বোলিং আক্রমণের অন্যতম অস্ত্র তাসকিন আহমেদ। যদি তার অভিষেকের কথা স্মরণ করা না হয় তার সূচনার এ গল্পটা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। টি-২০ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তাসকিন ২৪ রানে ১ উইকেট শিকার করে ঝলক দেখিয়েছেন। তবে সেরাটা যে তখনো বাকি। জুনে ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে তার স্মরণীয় এক অভিষেক হয়। আট ওভারে ২৮ রানে ৫ উইকেট নিয়ে সফরকারীদের ব্যাটিং একাই দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছিলেন।
Post a Comment