ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ ডিআরএস সিস্টেম
প্রথম ইনিংসই রিভিউয়ের নতুন রেকর্ড দিয়ে শুরু। এক ইনিংসে ১০টি রিভিউ দিয়ে শুরু যে টেস্ট, শেষ পর্যন্ত সেটি ম্যাচের রেকর্ডে গিয়ে থামল। চট্টগ্রাম টেস্টে মোট ২৬ বার রিভিউ নেওয়া হয়েছে। এক টেস্টে এত রিভিউয়ের ঘটনা আগে কখনোই ঘটেনি। আজ শেষ দুটি উইকেটও রিভিউয়েই চূড়ান্ত হলো। দুটিই গেল ইংল্যান্ডের পক্ষে। যদিও কুমার ধর্মসেনার শেষ সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।
শুধু শেষ সিদ্ধান্ত বলে নয়, শ্রীলঙ্কান এই আম্পায়ার এই টেস্টে বারবার আড়াআড়ি ভঙ্গিতে দুই হাতে দুই কাঁধ ছুঁয়ে নিজের আগের সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নিয়েছেন। যে ভঙ্গিটা অনেকটা ক্ষমা চাওয়ার মতোই।
আজ তাইজুলের আউটের বেলাতেও তা-ই হয়েছে। ধর্মসেনা দিয়েছিলেন নট আউট। ইংল্যান্ড রিভিউ নিয়ে পেয়ে গেল আউট।
এই টেস্টের চতুর্থ দিন পর্যন্ত ২৪ বার রিভিউ নেওয়া হয়েছিল। শেষ দিনে আরও দুটি। দুই দলই সমান ১৩টি করে রিভিউ নিয়েছে। যদিও বেশির ভাগ রিভিউ গেছে ইংল্যান্ডের পক্ষেই। রিভিউ ব্যবহারও শেখা এখন জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে দেখা যাচ্ছে।
প্রতি ৮০ ওভারে দুটি করে রিভিউ নেওয়ার সুযোগ থাকে। এর মধ্যে দুটি ভুল রিভিউ নিয়ে শেষ হলে গেলে ৮০ ওভার পর নতুন দুটি রিভিউ পাবে সেই দল। রিভিউ নেওয়া দলের পক্ষে সিদ্ধান্ত গেলে তাদের বরাদ্দ রিভিউ কমানো হয় না।
এই টেস্টে দুটি দল যে এতগুলো রিভিউ নিতে পেরেছে, একাধিকবার সফল রিভিউ করতে পেরেছে বলেই।
যে ২৬ বার রিভিউ নেওয়া হয়েছে, এর মধ্যে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত ভুল প্রমাণিত হয়েছে ১১ বার। ধর্মসেনার সিদ্ধান্ত ভুল প্রমাণিত হয়েছে আটবার। বাকি তিনটি ক্রিস গ্যাফেনির। লঙ্কান আম্পায়ারের বারবার ভুল দেখে কেউ তো রসিকতাও করছে, ‘ধর্মসেনা রিভিউ সিস্টেম (ডিআরএস!’
এটা ঠিক, চট্টগ্রামের উইকেট কখনো কখনো অস্বাভাবিক আচরণ করে। কিন্তু তাতে এতবার বোকা বনে যাবেন আম্পায়াররাও!
এমন নয়, এই টেস্টে আম্পায়াররা ওই ১১ বারই ভুল করেছেন। কখনো আম্পায়ার ভুল সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, কিন্তু অধিনায়ক রিভিউ নেননি। পরে রিপ্লেতে দেখা গেছে, অধিনায়ক রিভিউ চাইলেই ভালো করতেন।
অর্থাৎ এই সিদ্ধান্তগুলোও ভুল দিয়েছেন আম্পায়াররা। এক টেস্টে যদি ১৩-১৪টি ভুল সিদ্ধান্ত হয়, আম্পায়ারিং নিয়ে প্রশ্ন তো ওঠেই। এই প্রশ্নও উঠছে, ডিআরএস কি শতভাগ নির্ভুল?
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড এই এত দিন পরে এসে ডিআরএস ব্যবহারে রাজি হয়েছে। ভারতের ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজেই রিভিউ থাকছে। বিসিসিআই রিভিউ–প্রযুক্তি শতভাগ নির্ভুল কি না, এই সংশয় থেকেই এত দিন রাজি হয়নি।
এই টেস্টের অভিজ্ঞতায় বাংলাদেশের সমর্থকদের কারও মনেও এই প্রশ্ন উঠতে পারেই, বিশেষত যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে খেলা দেখছেন টিভিতে। ডিআরএসে চালুর পর আম্পায়ার মার্ক বেনসন অবসরই নিয়ে নিয়েছিলেন, তাঁর সিদ্ধান্ত ডিআরএসে বাতিল হয়ে গিয়েছিল বলে। আম্পায়ারদের জন্যও এ এক মানসিক চাপ।
ধর্মসেনা নিজে ১৭২টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। নিজের অভিজ্ঞতা আর বোধ থেকেই সিদ্ধান্ত দেন আম্পায়াররা। সন্দেহ নেই, ধর্মসেনা এখানে চরম অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন, দারুণ অভিজ্ঞতা থাকার পরও। দ্বিতীয় টেস্টেও তাঁরই দায়িত্ব পালন করার কথা; যদি না এই টেস্টের পর হতাশায় ধর্মসেনা অবসর নিয়ে নেন!
Post a Comment