মোস্তাফিজকে ছাড়িয়ে যেতে চান টেকনাফের এই ক্রিকেটার
তাসকিন, রুবেল ও মোস্তাফিজকে ছাড়িয়ে যেতে চান ক্রিকেট জগতের আরেক নক্ষত্র আয়াছ উদ্দিন বাবুল। বোলিং জগতে পা দিয়ে বিশ্বকে চমকে দিতে চান তিনি। টেকনাফ থেকে লাল সবুজের পতাকা নিয়ে বিশ্ব দরবারে উড়াতে চান উদীয়মান এই ক্রিকেটার।
টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়ার উত্তর শিলখালীর অজগপাড়া গায়ে ১৯৯৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জন্ম গ্রহণ করেন বাবুল। ছোট বেলা থেকে ক্রিকেটের প্রতি খুব মনোযোগী ছিল সে। সময়ের সাথে ধীরে ধীরে সে হয়ে উঠে পেসার বোলার। কক্সবাজার, চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন স্থানে ক্রিকেটে দুর্দান্ত দক্ষতা দেখিয়ে সে অর্জন করেছে যোগ্যতার খ্যাতি।
খেলার শুরু থেকেই তার স্বপ্ন ছিল জাতীয় টিমের হয়ে ক্রিকেট খেলা। সেই স্বপ্ন পুরণ হলে ব্যাটে-বলে কৌশল আর শক্তি প্রয়োগ করে দেশের জন্য বিজয় ছিনিয়ে আনতে দৃঢ় প্রত্যয়ী এ খেলায়াড়। তার শারীরিক গঠন ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি। যা একজন আদর্শ ক্রিকেটার হওয়ার উপযোগী। এটিই তার জীবনের স্বপ্ন।
বাবুলের ক্রিকেট জীবনে রয়েছে বিরাট সাফল্য। একটি ম্যাচে তার ব্যক্তিগত সংগ্রহ রয়েছে নটআউট ছাড়া ১১৪ রান। ৪৭ বলে ১৪ টি ছক্কা ও ৪ টি চারে তিনি ১১৪ রান অর্জন করেছিলেন।
তিনি ২০১২ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত মোট ৯৪ টি ম্যাচ খেলে ২ হাজার ৭৭৭ রান অর্জন করেছেন। ৪২ ম্যাচে ম্যান অব দ্য ম্যাচ অর্জিত হয়েছে তার। উইকেট ২৫২, ক্যাচ ৯৪, অর্ধ শতক ১৪, দুটি শতক। ম্যান অব দ্য সিরিজ ১২। একটি ম্যাচে সর্বোচ্চ ৭ উইকেটও অর্জন করেছেন তিনি। দুর্দান্ত এ ক্রিকেটার বর্তমানে চট্টগ্রাম ইস্পাহানি ক্রিকেট একাডেমীতে অধ্যয়নরত।
স্বপ্নের পথ ধরে ঠিকই হাঁটছিলেন ক্রিকেটার বাবুল। কিন্তু সরল পথটি হঠাৎ বন্ধ হয়ে পড়ে। ২০১৫ সালের ৩ জুলাই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান বাবুলের পিতা নেয়ামত উল্লাহ। বাবার স্বপ্ন ছিল সন্তান ক্রিকেটার হবে। জাতীয় দলে খেলবে। ছেলে ক্রিকেট নিয়ে ঘুরে বেড়াবে বিশ্বময়। কিন্তু বাবা স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেখে যেতে পারেননি।
তিনি বলেন, বাবা মারা যাওয়ায় এখন পরিবারে চরম সংকটে দিন কাটছে। উপার্জনক্ষম কেউই নেই। টেকনাফ থেকে কক্সবাজার আসবে, সেই গাড়ি ভাড়াটুকুও যোগাড় করতে তাকে হিমশিম খেতে হয়। ফলে ঢাকায় গিয়ে বিসিবির সাথে যোগাযোগ করাটাও তার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠছেনা।
বাবুল জানান, তিনি বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চান। নিজেকে জাতীয় দলের খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। এজন্য তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
আত্মবিশ্বাসী আয়াছ উদ্দিন বাবুল বলেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের অল রাউন্ডার আন্দার রাসেলর মতো হতে চাই। টাইগারের দেশকে আরেকবার বিশ্ব দরবারে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ক্রিকেট বোর্ডের ট্রেনিং ক্যাম্পে তাকে একবার সুযোগ দেয়া হোক। সুযোগ পেলে তিনি বিসিবিকে নিজের যোগ্যতা প্রমান করতে সক্ষম হবেন। পাশাপাশি মোস্তাফিজুর রহমানের চেয়েও ভাল পেসার বোলার হতে পারবেন বলে তার দৃঢ় বিশ্বাস
বাবুলের ক্রিকেট জীবনে রয়েছে বিরাট সাফল্য। উদীয়মান এ ক্রিকেটার বর্তমানে চট্টগ্রাম ইস্পাহানি ক্রিকেট একাডেমীতে অধ্যয়নরত।
বাহারছড়াস্থ শামলাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল মনজুর বলেন, আমার স্কুল প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত যত খেলোয়াড় তৈরি হয়েছে আয়াছ উদ্দিন বাবুল তাদের মধ্যে ব্যতিক্রম। তার ক্রীড়া নৈপূণ্যে আমরা অর্জন করেছি ব্যাপক সাফল্য।
শামলাপুর শিফা গার্ডেন’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিব উল্লাহ হাবিব বলেন, কেবল টেকনাফ নয়; সব জায়গাতেই ভাল খেলে বাবুল। তার খেলা দেখলে মনে হয় কোন জাতীয় দলের খেলোয়াড়ের খেলা দেখছি। একদিন সে-ই ক্রীড়া জগতে বয়ে আনবে অসাধারণ সাফল্য।
কক্সবাজার ক্রীড়া লেখক সমিতির সভাপতি সাংবাদিক এম আর মাহবুব মনে করেন, ক্রীড়া জগতের অসাধারণ এক প্রতিভা বাবুল। বিসিবি’র সুনজর পেলে বাবুলই মুমিনুল হক সৌরভ হয়ে আরেকবার গৌরব বয়ে আনবে কক্সবাজারবাসীর জন্য।
কক্সবাজার জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জসিম উদ্দিন বলেন, কক্সবাজারের টেকনাফ। এ উপজেলার একটি উপকূলীয় এলাকা বাহারছড়া। আর এখানেই পড়ে রয়েছে ক্রিকেটের অনন্য প্রতিভা। আয়াছ উদ্দিন বাবুলের মতো ক্রিকেটাররা জাতীয় দলে খেলবে বাংলাদেশ টিম আরও বেশি এগিয়ে যাবে।
Post a Comment