গম্ভীরকে নিয়ে বিশ্লেষণ করা শুরু করেছে ভারতীয় মিডিয়া
জিততে থাকলে কেউ কিছু বলবে না, এমনকি ভুলগুলো নিয়ে কেউ কাটা ছেঁড়া করবে না। কিন্তু হারলেই বেরিয়ে আসবে থলির বিড়াল। আর সেটাই হয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স গৌতম গম্ভীরের ক্ষেত্রেও। আইপিএলের নবম আসরে প্লে-অফ থেকে বিদায় নেওয়ার পর গম্ভীরকে নিয়ে বিশ্লেষণ করা শুরু করেছে ভারতীয় মিডিয়া। যেখানে তার অধিনায়কত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। প্রশ্ন তোলা হচ্ছে সাকিবকে উপেক্ষা করা নিয়ে জন্যও।
এ বিষয়ে ভারতীয় বাংলা গণমাধ্যম ‘এবেলা’ এ বিষয় নিয়ে একটা প্রতিবেদন তৈরি করেছে যা পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
তাঁর নেতৃত্বে দু’বার আইপিএল জিতেছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। এবারও প্লে-অফ থেকে বিদায় নিয়েছে, যেটাকে খুব খারাপ ফল মোটেও বলা যাবে না। কিন্তু তারপরেও গৌতম গম্ভীর খুব সুখী অধিনায়ক হিসাবে নিজের শহর দিল্লিতে আছেন কি? মনে হয় না। বরং একাধিক সূত্র থেকে যা ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, নাইটদের অন্দরমহলেই নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে অধিনায়কের একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়ে। যার বেশিরভাগই প্রথম একাদশ নির্বাচন এবং ব্যাটিং অর্ডার সেট করা নিয়েও। আরও চাঞ্চল্যকর হচ্ছে, সেট হয়ে যাওয়া ব্যাটসম্যানকে যেভাবে তিনি পরীক্ষার মধ্যে ঠেলে দিয়েছেন, তা দেখে অনেকেই বিস্মিত। যেমন সূর্যকুমার যাদব তিন নম্বরে নেমে সফল হওয়ার পরে তাঁর ব্যাটিং অর্ডার পাল্টে গেল। কোথা থেকে হঠাৎ ক্রিস লিনকে খেলিয়ে দেওয়া হল কয়েকটি ম্যাচে। কলিন মুনরো রান পাচ্ছেন না দেখেও তাকে তিন নম্বরে নামানো হলো।
কথা উঠেছে, সাকিব-আল-হাসানকে উপেক্ষা করা নিয়েও। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের সঙ্গে আগের ম্যাচেই সাকিব দলে থাকার পরেও জেসন হোল্ডারকে আগে ব্যাট করতে পাঠানো হয়। যা নিয়ে রীতিমতো কথাবার্তা চলছে নাইট শিবিরে। প্রশ্ন উঠেছে, সাকিব ব্যাট হাতে ম্যাচ জিতিয়েছেন। দলের গুরুত্বপূর্ণ অলরাউন্ডার। কিন্তু তিনি রান পেয়েছেন দেখে তাঁকে আত্মবিশ্বাস দেওয়ার বদলে আরও নীচে ঠেলে দেওয়া হল কেন? দিল্লিতে বুধবারের প্লে-অফে বিস্ময়করভাবে সাকিবকে বসিয়ে দেওয়া হল। অথচ, অনেকেই চেয়েছিলেন হোল্ডার নন, সাকিবকে খেলানো হোক।
পীযূষ চাওলাকে হঠাৎ করে তিন নম্বরে নামাতে শুরু করেছিলেন নাইট অধিনায়ক। আবার বুধবার ফিরোজ শা কোটলার উইকেট, যেখানে লেগস্পিনাররা সফল হয়ে থাকেন, সেখানে তাঁকে বসিয়ে দেওয়া হল! নাইটদের প্রথম একাদশ দেখে অনেকেই বিস্মিত। যে মাঠে অনিল কুম্বলের দশ উইকেট, যেখানে চলতি আইপিএলে প্রত্যেকটা ম্যাচে সফল হয়েছেন দিল্লি ডেয়ারডেভিল্সের লেগস্পিনার অমিত মিশ্র, সেখানেই কিনা চাওলাকে বাদ দিয়ে দেওয়া হল! আবার সেই সতীশকে খেলানো হল। যিনি কী করে টিমে জায়গা পেয়েছেন, সেটাই অনেকের কাছে রহস্য হয়ে দেখা দিয়েছে।
দিল্লিতে ম্যাচ শুরুর আগেই নাইট রাইডার্স আধমরা হয়ে ছিল কি না, সেই প্রশ্ন তাই উঠে পড়ছে। এমন নয় যে, অধিনায়ক বুধবারেই শুধু বিস্ময়কর প্রথম একাদশ আর ব্যাটিং অর্ডার বাছলেন। গোটা আইপিএলেই তিনি এরকম চালিয়েছেন। কিন্তু টিম জিতে যাচ্ছিল আর প্লে-অফে উঠে গিয়েছিল বলে হয়তো সেভাবে কাঠগড়ায় ওঠেনি। কারও কারও মতে যদিও ও সব নয়। আসলে ইউসুফ পাঠান আর আন্দ্রে রাসেল খেলে দিচ্ছিলেন বলে সমস্ত ভুল সিদ্ধান্ত ঢাকা পড়ে যাচ্ছিল। রাসেল চোট পেয়ে বাইরে। তিনি কোটলাতেও নামতে পারলেন না। আর ইউসুফ মোক্ষম সময়ে এসে প্লে-অফের সাডেন ডেথ ম্যাচটাতেই রান করতে পারলেন না। তাতেই নাইটদের আসল চেহারা বেরিয়ে পড়ল। অধিনায়কের ভুলত্রুটি ঢেকে দেওয়ার জন্য কোটলায় কোন পাঠান-বিক্রম ছিল না।
আকর্ষণীয় হতে যাচ্ছে, গম্ভীরকে নিয়ে কেকেআর ভবিষ্যতের জন্য কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেটা। ম্যানেজমেন্টের যদি তিনি প্রিয় পাত্র হন, তাহলে হয়তো থেকে যাবেন। একইসঙ্গে প্রশ্ন উঠতে পারে, যে ক্রিকেটার পাঁচ বছর আন্তর্জাতিক মঞ্চের বাইরে, তাঁর পক্ষে আইপিএলের তীব্র সংঘাতপূর্ণ লড়াইয়ের সঙ্গে মানানো কি সম্ভব? এবারই অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, বলের চেয়ে রান বেশি সমীকরণ রাখতে গিয়ে গম্ভীর সমস্যা পড়েছেন। সামনের বছর কি আর পারবেন? দুঃখের হচ্ছে, নিজের শহর দিল্লিতেই প্রশ্নগুলো উঠল।
Post a Comment