দর কষাকষি করছেন হিথ স্ট্রিক
জিম্বাবোয়ে ক্রিকেটের পক্ষে তার বেতন বহন করা সম্ভব নয় বলে ২০১৩ সালে বোলিং কোচের দায়িত্বে হিথ স্ট্রিককে বহাল রাখেনি তারা। কপালটা খুলতে তাঁকে অপেক্ষা করতে হয়েছে এক বছর। বছরে ৮০ হাজার মার্কিন ডলার সম্মানী চুক্তিতে ২০১৪ সালের জুলাইয়ে বোলিং কোচ হিসেবে ২ বছর মেয়াদে তাঁকে নিয়োগ করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ( বিসিবি)। হেড কোচ হাতুরুসিংহে,স্ট্রেন্থ অ্যান্ড কন্ডিশনিং কোচ মারিও ভিল্লাভারান কিংবা ফিল্ডিং কোচ রিচার্ড হ্যালসলের সঙ্গে যেভাবে চুক্তি করেছে বিসিবি, হিথ স্ট্রিকের সঙ্গে সেভাবে চুক্তি হয়নি। অন্য দুই কোচের ক্ষেত্রে মেয়াদটা ২ বছরের এবং তাদের মাসিক বেতন ধার্য হলেও হিথ স্ট্রিকের সম্মানী কিন্তু মাসিক ভিত্তিতে নয় ! বছরে সর্বসাকুল্যে তাকে দলের সঙ্গে ২০০ দিন থাকতে হবে। কর্মদিবসের সংখ্যা বেশি হলে প্রতি দিন ৪৫০ ডলার হারে পাবেন বাড়তি প্রাপ্য ! মূলত এই চুক্তির কারণেই ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের ( আইপিএল) দল গুজরাত লায়ন্সের বোলিং কোচের দায়িত্ব নেওয়ায় হিথ স্ট্রিককে বাধা দিতে পারেনি বিসিবি।
বাংলাদেশ দলের বোলিং কোচের দায়িত্ব পেয়ে দলের পেস বোলিং ইউনিটকে ভয়ঙ্কর করে তোলার পেছনে কারিগর হিথ স্ট্রিক। গত ২ বছরে বাংলাদেশ দলের ৩ টেস্ট,১৮ ওয়ানডে এবং ৯টি টোয়েন্টি-২০ ম্যাচ জয়ের রেকর্ডটা তাঁর কোচিং অধ্যায়েই। স্পিন নির্ভর বাংলাদেশ দলকে পেস বোলিং কেন্দ্রিক দলে পরিণত করার পেছনে অবদান জিম্বাবোয়ের সাবেক এই পেস অল রাউন্ডারের। বিস্ময় কাটার মাস্টার হিসেবে মুস্তাফিজুরের আবির্ভাব বিশ্বে।তাঁর আবিষ্কারক কিন্তু এই হিথ স্ট্রিকই। একাদশে চার পেস বোলার নিয়ে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশ বিস্ময় পারফরম্যান্স করেছে হিথ স্ট্রিকের ফর্মুলাতেই। এমনিতে বাংলাদেশ দলের পেস বোলিং কোচের দায়িত্ব নিয়ে প্রোফাইল বাড়িয়েছেন, তার উপর গুজরাত লায়ন্সের কোচের দায়িত্ব নিয়ে দলটির বোলিং ইউনিটকে দারুণভাবে তৈরি করেছেন জিম্বাবোয়ের সাবেক এই অধিনায়ক। সে কারণেই তার উপর নজর পড়েছে বিসিসিআই-এর। ভারতের ন্যাশনাল একাডেমির বোলিং কোচের দায়িত্ব পাওয়ার আবেদনও করেছেন তিনি। হিথ স্ট্রিকের ইংল্যান্ড ভিত্তিক এজেন্ট টম হাওয়ার্ড জানিয়েছেন সেটা। তাঁকে উদ্ধৃত করে দ্য হিন্দু ক’দিন আগে সে খবরই প্রকাশ করেছেন। এ খবরের সত্যতা স্বীকার করে তাকে পেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বিসিসিআই-এর যুগ্ম সচিব নিরঞ্জন শাহ।
এখনও বাংলাদেশ অধ্যায়ে ২ বছরের মেয়াদ শেষ হয়নি হিথ স্ট্রিকের। জুনে শেষ হবে তাঁর মেয়াদ। মেয়াদ থাকাকালীন একজন কোচ কী ভাবে অন্য একটি দেশের বোর্ডে চাকরির আবেদন করেন? তা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিসিবি’র ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান। তিনি বলেন, “হিথ স্ট্রিক তো এ ব্যাপারে বিসিবিকে কিছুই জানাননি। আমরা তাঁকে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা দেওয়ার পরও কেন এমন আচরণ করল ?” ২০১৯-এর ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপ পর্যন্ত হিথ স্ট্রিককে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বোলিং কোচ হিসেবে রাখতে চায় বিসিবি। সেই আগ্রহের কথা জানার পরও হিথ স্ট্রিক কেন বিসিসিআই-এর কাছে আবেদন করবেন, প্রশ্ন আকরামের। হিথ স্ট্রিক দায়িত্ব ছেড়ে দিলে তাঁর বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন না বিসিবি’র ওয়ার্কিং কমিটির চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন সিরাজ। তিনি বলেন, “এর আগে তো শ্রীলঙ্কার চম্পক রমানায়েকে বোলিং কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর আমলেই তো আমরা রুবেলকে পেয়েছি। ও এখান থেকে প্রোফাইল বাড়িয়ে নিয়েছে বলে ভারতে অফার পেয়েছে। হিথ স্ট্রিক চলে গেলে আমাদের কিছু আসে যায় না। আমরা তাঁর চেয়েও ভাল বোলিং কোচ পাব।’
তবে হিথ স্ট্রিকের দরজা এখনও খোলা রেখেছে বিসিবি। এই অবস্থানের কথা জানিয়েছেন বিসিবি’র সিইও নিজামুদ্দিন চৌধুরী সুজন। তিনি বলেন, “এখনও তিনি আমাদের বোলিং কোচ। পরবর্তী মেয়াদে চুক্তির ব্যাপারে হিথ স্ট্রিকের এজেন্ট আমাদের সাথে কথা বলেছেন।” পরবর্তী মেয়াদে বাংলাদেশের বোলিং কোচের দায়িত্ব পালনে আগ্রহী থাকলে তাঁর বেতন-ভাতা এবং সুযোগ সুবিধা বাড়াতে আপত্তি নেই বিসিবি’র। তবে তার আগে হিথ স্ট্রিকের নিজের মুখ থেকেই দাবি-দাওয়াগুলো শুনতে চান বিসিবি’র সিইও। তিনি বলেন,“ আগে তার ডিমান্ড শুনি,তারপরও দেখি।” তাহলে তো দু’বোর্ডের সঙ্গে দর কষা-কষি করছেন হিথ স্ট্রিক। বিসিসিআই চাইলে হিথ স্ট্রিককে রাখা যে সম্ভব হয়ে উঠবে না, তা অবশ্য ধরেই নিয়েছে বিসিবি।
Post a Comment